, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ , ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ


১৪ দলের বৈঠকে ডিবির হারুনের কঠোর সমালোচনা

  • আপলোড সময় : ৩০-০৭-২০২৪ ০২:৫৪:০৩ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ৩০-০৭-২০২৪ ০২:৫৪:০৩ অপরাহ্ন
১৪ দলের বৈঠকে ডিবির হারুনের কঠোর সমালোচনা
এবার ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদের কঠোর সমালোচনা করেছেন ১৪ দলীয় জোটের নেতারা। গতকাল সোমবার (২৯ জুলাই) গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন ১৪ দলের নেতারা। কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কের সঙ্গে খাবার গ্রহণের ছবি ডিবির হারুনের ফেসবুক পেজে পোস্ট করার বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।

এদিকে বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে রাশেদ খান মেনন ছাড়াও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারিসহ একাধিক নেতা কথা বলেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।

ডিবির হারুন অর রশীদের প্রসঙ্গে ১৪ দলের বৈঠকে হওয়া আলোচনার ব্যাপারে হাসানুল হক ইনু বলেন, বৈঠকে আমি ও রাশেদ খান মেননসহ অনেকেই কথা বলেছেন। মূলত কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকে ঘিরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়। এটা সমাধানের দায়িত্ব রাজনীতিবিদদের। রাজনীতিবিদরা সংলাপের মাধ্যমে এর সমাধান করবেন, সেটাই বাঞ্ছনীয়।  এর বাইরে আমলা দিয়ে রাজনৈতিক বিষয় সমাধানের চেষ্টা করাটা সঠিক নয়। বৈঠকে আমরা সরকারকে বলেছি, আমলা দিয়ে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করার চেষ্টাটা বাদ দিতে। এটা খুবই লজ্জাজনক।
 
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রথম দিকে তিনজন মন্ত্রী সরকারের তরফে কথা বলেন, সে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখাই ভালো ছিল। মাঝখানে আমলা দিয়ে এর সমাধান করতে যাওয়াটা ঠিক নয়। পাশাপাশি কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের বিরোধে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টিও ভালো সিদ্ধান্ত ছিল না বলে উল্লেখ করেন জাসদ সভাপতি। ১৪ দলের বৈঠকে হারুন অর রশীদকে ডিবির পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার দাবি উঠেছিল কি না এমন প্রশ্নের জবাবে হাসানুল হক ইনু বলেন, হারুন একজন সরকারি কর্মকর্তা। তিনি তার পদে থাকবেন কি না সে ব্যাপারে সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে।

এছাড়া জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার প্রসঙ্গে বৈঠকে হওয়া আলোচনায় নিজের অবস্থান তুলে ধরে ১৪ দলের এই সিনিয়র নেতা বলেন, আলোচনায় আমি বলেছি, জামায়াত-শিবির হচ্ছে বাইরের শত্রু, তারা আক্রমণ করেছে, ওদের ধ্বংস করতে হবে, মোকাবিলা করতে হবে, নিশ্চিহ্ন করতে হবে। কিন্তু একই সঙ্গে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে নিজেদের মধ্যে যে ভুলত্রুটি, ঘাটতি আছে সেগুলোকেও সংশোধন করতে হবে। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এর ভিত্তিতেই জনগণের আস্থাটা আবার মজবুত করতে হবে।

১৪ দলের সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সভায় উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান, গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি শাহাদাত হোসেন প্রমুখ।

এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে খাওয়ানোর পর সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করে বিষয়টিকে ‘জাতির সঙ্গে মশকরা’ বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। সোমবার (২৯ জুলাই) রাষ্ট্রপক্ষকে উদ্দেশ করে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
 
রোববার (২৮ জুলাই) রাতে ডিবি কার্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ককে খাবার খাইয়ে সেই ছবি ডিবি কর্মকর্তা হারুন তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে শেয়ার করেন। ছবির ক্যাপশনে তিনি লেখেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। তাই ওদের ডিবি কার্যালয়ে এনে তাদের সঙ্গে কথা বললাম।’

পরে সোমবার হাইকোর্ট বলেন, ‘ডিবি অফিসে যাকে তাকে ধরে নিয়ে যাবেন, তারপর খাবার টেবিলে বসাবেন। এভাবে জাতির সঙ্গে মশকরা করবেন না।’  এবারই প্রথম নয়, এর আগেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা থেকে শুরু করে বিনোদন জগতের সেলিব্রিটিদের সঙ্গে ডিবি অফিসে হারুনের খাওয়ার ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (২৬ জুলাই) নিরাপত্তার কথা বলে আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে হাসপাতাল থেকে মিন্টো রেডের ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। পরে শনিবার (২৭ জুলাই) সারজিস, হাসনাত আব্দুল্লাহ ও নুসরাত তাবাসসুমকেও ডিবি হেফাজতে নেয়া হয়।

পরে রোববার (২৮ জুলাই) রাতে ডিবি হেফাজত থেকেই সব ধরনের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক। তাদের স্বাক্ষরিত বার্তায় বলা হয়, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন ও তার প্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেকেই অপ্রত্যাশিতভাবে আহত-নিহত হয়েছেন। এছাড়া রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন সহিংস ঘটনা ঘটেছে। আমরা এ সকল অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত বিচারের দাবি জানাই।’

তারা আরও বলেন, ‘আমাদের প্রধান দাবি ছিল কোটার যৌক্তিক সংস্কার, যা ইতোমধ্যে সরকার পূরণ করেছে। এখন শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুত শক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানাই। সার্বিক স্বার্থে এই মুহূর্ত থেকে আমাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করছি।’
সর্বশেষ সংবাদ
নির্বাচন যত দেরিতে হবে, ষড়যন্ত্র তত বৃদ্ধি পাবে: তারেক রহমান

নির্বাচন যত দেরিতে হবে, ষড়যন্ত্র তত বৃদ্ধি পাবে: তারেক রহমান